ইতিহাস

নাটোর, মুঘল শাসনামলের শেষ সময় থেকে বাংলার ক্ষমতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। নাটোর রাজ্য কিছুটা উন্নতির শিখরে পৌঁছে রাজা রামজীবনের দত্তকপুত্র রামকান্ডের স্ত্রী রাণী ভবানীর রাজত্বকালে। দীর্ঘ ১৬৫ বছরের অর্থাৎ ইংরেজ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের চৌদ্দ বছরের প্রশাসনিক ইতিহাস নাটোর মহকুমা সদর হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৮৪ সালে নাটোর মহকুমা জেলা সদরের মর্যাদা লাভ করে। জন হিতৈষী রানী ভবাণীর নায়েব দয়ারামের দিঘাপতিয়া পরগনায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান উত্তরা গনভবণটি রাজা প্রমদানাথের সময় গ্রীক স্থাপত্য কলার অনুসরণে রূপ কথার রাজ প্রাসাদে উন্নীত হয়। কালক্রমে এই রাজপ্রাসাদ প্রথমত: গর্ভনর হাউস, পরবর্তীতে বাংলাদেশ অভ্যুদ্বয়ের পরে উত্তরাগণভবণে পরিণত হয়।

বাংলার রাজা-জমিদারদের মধ্যে দিঘাপতিয়ার রাজবংশ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। দয়ারাম রায় এই রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমদানাথ রায়ের জ্যৈষ্ঠপুত্র প্রমথনাথ রায় ১৮৯৪ সালে দায়িত্ব ভার গ্রহণ করার পর তার তিন কনিষ্ঠ সহোদর কুমার বসন্তকুমার রায়, কুমার শরৎ কুমার রায়, এবং কুমার হেমেন্দ্র কুমার রায়ের জন্য বড়াল নদীর তীরে নন্দীকুজা নামক স্থানে “দিঘাপতিয়া জুনিয়র রাজ দয়ারামপুর এষ্টেটস” স্থাপন করেন। তাদের প্রপিতামহের পিতামহ নাটোরের রাণী ভবানীর অসাধারণ দক্ষ দেওয়ান ও দিঘাপতিয়ার রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা দয়ারামের নামানসারে এই এলাকার নাম হয় “দয়ারামপুর” আর বাড়ীর নাম হয় “দয়ারামপুর জমিদার বাড়ী” মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে শহীদ লেঃ কর্ণেল আব্দুল কাদিরের নামে এই জায়গায় কাদিরাবাদ সেনানিবাস স্থাপিত হয় স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দয়ারামপুর ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়।

এহেন ইতিহাস সমৃদ্ধ চলনবিলের পশ্চিম অঞ্চল তথা নাটোর জেলা যদিও বিভিন্ন সু-প্রাচীন ঐতিহ্য ও সুখ্যাত কর্মকীতির উর্বর লালন ভুমি, তথাপি যুগ যুগ ধরে এলাকাটি নানা দিক থেকে উপেক্ষিত এবং পশ্চাৎপদ। ব্যাপক দারিদ্রতা, নিরক্ষরতা, অপুষ্টি, ভূমিহীনতা, বাল্য বিবাহ প্রভৃতি এখনও বিরাজমান চলন্ত সমস্যা। আধুনিক শিক্ষা, তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ আধুনিক যুগের সুযোগ-সুবিধা ও সমসাময়িক অগ্রগতির ছোয়া আজও প্রায় অনুপস্থিত। আবার বন্যা, ঘূর্ণীঝড়, ভুমিকম্প, বর্জ্রপাত, শীতের তীব্রতা ও খরতাপের দাহন ইত্যাদি প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেন নিত্য সঙ্গী। আর এসবের অনুঘটক হলো- অত্র এলাকার মানুষ। সোফিষ্ট যুগের দাশর্নিকরা বলেছেন- Man is the masure of all things. অর্থাৎ- মানুষ হলো সবকিছু পরিমাপের মাপকাঠি” মানুষ তার আদিম, মধ্যযুগীয় বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা, কামনা-বাসনা, লোভ-লালসা-হিংসা-বিদ্বেষ, কাম-ক্রোধ, থেকে সংযত হয়ে গড়ে উঠবে সৌহার্দ-সম্প্রীতি মায়ামমতা, স্নেহ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ একজন মানুষ হিসেবে। যে কিনা ভালো-মন্দ ন্যায়-অন্যায় উচিত-অনুচিত, মঙ্গল-অমঙ্গল, সুন্দর-অসুন্দর, সত্য-মিথ্যা, বৈধ-অবৈধ, যথার্থ-অযথার্থ, প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়, পাপ-পূর্ণ, হালাল-হারাম, ইহকাল-পরকাল ইত্যাদি নৈতিক মুল্যবোধের বিষয় গুলো আয়ত্ব করতঃ জীবনের প্রতিটি স্তরে বাস্তবায়ন ঘটাবে। এজন্য প্রয়োজন আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর, যৌক্তিক, নৈতিক ও ধর্মীয় তথা জীবন ও জগতের সমন্বিত জ্ঞান নির্ভর শিক্ষা-যা একজন মানুষকে পরিপূর্ণ যোগ্য-দক্ষ, সৎ-আত্নবিশ্বাসী, বিচক্ষণতা-দুরদর্শিতা, নেতৃত্বগুণ, সিদ্ধান্ত গ্রহনে প্রত্যুপন্নমস্তিষ্ক মেধাবী তথা আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। কেবল মাত্র এরূপ গুণ সম্পূর্ণ মানুষের দ্বারাই সম্ভব একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সোনার বাংলা গড়ে তোলা। সুতরাং উক্ত সার্বিক অবস্থার অন্তত কিঞ্চিত পরিবর্তনে আমরা আমাদের প্রচেষ্টাকে কাজে লাগাতে চাই।